সাভারে দৃপ্ত শপথে মানবাধিকার দিবস: অবিচার বিরোধী কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী

সাভারে দৃপ্ত শপথে মানবাধিকার দিবস: অবিচার বিরোধী কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভারের সকালটা ছিল অন্য রকম। শীতের হালকা কুয়াশা কাটতে না কাটতেই উপজেলার প্রধান ফটকের সামনে ভিড় জমতে শুরু করে। মানুষের মুখে প্রত্যাশা, হাতে ব্যানার–ফেস্টুন, কণ্ঠে অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর—আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৫-এর বর্ণাঢ্য আয়োজন যেন পুরো এলাকা জুড়ে মানবতার এক নতুন প্রতিধ্বনি তৈরি করছিল।

মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং সামাজিক বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার আয়োজনে শুরু হওয়া মানববন্ধনটি খুব দ্রুতই রূপ নেয় জনতার ঢলে। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখে ছিল দৃঢ়তা—মানুষের অধিকারই সর্বোচ্চ, এই বিশ্বাস তারা যেন নিজের দেহভাষায়ই প্রকাশ করছিল।

মানববন্ধন শেষে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে র‍্যালি। স্লোগানে মুখরিত সেই অগ্রযাত্রা যেন সাভারের বাতাসকে আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল—নির্যাতনের বিরুদ্ধে নীরবতা মানেই মেনে নেওয়া নয়। র‍্যালি গিয়ে থামে শহীদ মিনারে। সেখানকার পরিবেশ যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায় যখন জাতীয় সঙ্গীতের সুর বেজে ওঠে। জাতীয় পতাকা আর সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের দৃশ্যটুকু শীতসকালের আলোয় যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

পতাকা উত্তোলনের পর বাতাসে ভেসে ওঠে শান্তির প্রতীক পায়রা আর গ্যাস বেলুন। সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল আমিন-এর উদ্বোধনী ঘোষণা যেন নতুন দিনের পথচলার সংকেত হয়ে প্রতিধ্বনিত হয় মানুষের মনে।

র‍্যালি শেষে মানুষজন ধীরে ধীরে ভিড় করেন উপজেলা মিলনায়তনে। সেখানেও আরেকটি উষ্ণ পরিবেশ। মঞ্চে ইঞ্জিনিয়ার অনিকুল ইসলাম-এর সাবলীল সঞ্চালনা এবং মোঃ জে এইচ রানা-র শান্ত–দৃঢ় সভাপতিত্বে পুরো সভা যেন পায় নতুন মাত্রা। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন তাহসান মাহমুদ চৌধুরী, যার কণ্ঠে ছিল মানবিকতার প্রতি এক গভীর আহ্বান।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন লে. কর্নেল অব. মোঃ আকরামুজ্জামান। তার কথায় উঠে আসে রাষ্ট্রীয় সচেতনতা, সামাজিক সমতা এবং মানুষের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতার বাস্তব চিত্র। তিনি বলেন, “মানবাধিকার মানে শুধু আইন নয়—এটি মানুষের প্রতি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।”

গুণীজনের উপস্থিতিতে পরিবেশ ছিল প্রাণময়
ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী, প্রশাসনের প্রতিনিধি, সমাজসেবী—সব মিলিয়ে মিলনায়তনের পরিবেশ ছিল এক বিশেষ দিনে মিলিত মানবতার সম্মিলিত স্পন্দন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাভার উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান নঈম, এমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান লিটন, সাভার প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা, সাভার উপজেলা সাংবাদিক সমিতির আহবায়ক সোহেল রানা, সাভার জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমন, সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মতিউর রহমান, সাভার সিটিজেন ক্লাবের সেক্রেটারি লায়ন মোহাম্মদ আলমগীর কবির, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী মেহেদি রানা শহীদ, মেহফুজার রহমান রাসেল, আরিফুর রহমান খন্দকার, নাসির উদ্দিন সোহেল প্রমুখ।

আয়োজনের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাজী নুরুল ইসলাম, যার নিবেদিত নেতৃত্ব পুরো দিনের কর্মসূচিকে দিয়েছে এক নীরব শক্তিশালী ভিত্তি।

“মানবাধিকার রক্ষা কোনো দিনের নয়, প্রতিদিনের দায়িত্ব” দিনব্যাপী এই আয়োজন শেষ হলেও মানুষের মধ্যে যেন নতুন এক বিশ্বাস জন্ম নেয়—মানবাধিকার শুধু প্রাতিষ্ঠানিক দাবি নয়, এটি প্রতিটি মানুষের প্রতি মানবতার অঙ্গীকার। বক্তারা, অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষ এবং আয়োজক সবাই মিলে যেন এক কণ্ঠে বলে ওঠেন—অধিকার রক্ষায় আমরা সবাই এক।

সাভারের এ দিনব্যাপী কর্মসূচি তাই শুধু অনুষ্ঠান নয়—এ ছিল মানবতার প্রতি সম্মিলিত উৎসর্গ, সমাজকে আরও সুন্দর করার সামষ্টিক প্রতিজ্ঞা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *