ঠাকুরগাঁওয়ে ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান সামলান জন্মগত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী  বাবা-ছেলে।

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের ফকদনপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হাবিব। জন্মগত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তিনি। পৌর শহরের রোড সুগারমিল গেটের বিপরীতে বাবার মুদি দোকান। ছোটবেলা থেকে থাকতেন মুদি দোকানে। বাবা মারা যাওয়ার পরে নিজে শুরু করেন দোকান। বিয়ের পরে এক ছেলে ও মেয়ের বাবা হয়েছেন তিনি। মেয়ে কানে শুনতে পেলেও কথা বলতে পারেন না। আর ছেলেটাও বাবার মতো বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ক্রেতারা দোকানে আসছেন স্বাভাবিক নিয়মে চা নাস্তা খেয়ে চলে যাচ্ছেন । বিক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দ্যে সবকিছু পরিবেশন করছেন । দেখে বুঝার উপায় নেই , দোকানে ও তার ছেলে কানে শুনতে পারে না । এমনকি কথা বলতে পারে না । ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচা কেনা করছেন তারা  ।  সকালে বাড়ির কাজ শেষ করে ছেলেকে সাথে নিয়ে দোকানে আসেন তিনি। বাবা-ছেলের যোগসাজশে চলে বেচা-কেনা। দোকানের প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে নিয়ে আসেন ছেলে। দোকান থেকে কেউ বাকি নিলে সেটিও লিখে রাখেন বাবা-ছেলে। তাদের দোকানের ক্রেতা রফিকুল বলেন, বাবা ছেলের ব্যবহার অনেক ভালো। কারো কথায় বিরক্ত হয় না বা রাগ করে না। তারা দুজনে এমন অক্ষম হওয়ার পরেও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। দোকানের ক্রেতা সহিদুল বলেন, ইশারায় ক্রেতাদের ভাষা বুঝে ফেলেন বাবা-ছেলে। লাল চা, দুধ চা নাকি পান সবই বুঝেন। তাদের মত অনেক প্রতিবন্ধী অন্যের কাছে হাত পেতে চললেও তারা হয়ে উঠেছে অনন্য উদাহরণ। হাবিবের প্রতিবেশী মনোয়ারা বলেন, তাদের পরিবারে অনেক অভাব। একটা ছোট্ট দোকান করে চলতে হয় তাদের। ছেলে, মেয়ে, বাবা তিনজনেই প্রতিবন্ধী। মেয়েটা ছোট চিকিৎসা করলে হয়তো ভালো হবে। সরকার যদি পরিবারটার পাশে দাঁড়ায় তাহলে পরিবারটা ভালোভাবে চলতে পারে। হাবিবের স্ত্রী আফরোজা আক্তার বলেন, ১১ বছর আগে হাবিবের সাথে বিয়ে হয়। স্বামীর মতো দুই সন্তানও কথা বলতে পারেন না। ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে তাদের সাথে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। স্বামী ও ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা হলেও মেয়ের হয়নি এখনো। মেয়েটা বড় হলে বিয়ে দিতে হবে। তাই চিকিৎসা করাতে চাচ্ছি যদি কিছুটা হলেও ভালো হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সারোয়ার মুর্শিদ আহমেদ বলেন, হাবিবের পরিবারকে ক্ষুদ্র ঋণ সহয়তা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া তার মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। পরিবারটির পাশে থাকবে সমাজসেবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *