সাভারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অধ্যক্ষসহ ৩ শিক্ষকের পদত্যাগ

সাভার প্রতিনিধি:

ঢাকা জেলার ঐতিহ্যবাহী সাভার মডেল কলেজে শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক।

রোববার দুপুরে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন তারা। এর আগে, সকাল থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী।

পদত্যাকৃতরা হলেন- জোরপূর্বক অধ্যক্ষের পদে থাকা ভূগোল বিভাগের প্রভাষক আলী হোসেন, দর্শন বিভাগের হোসাইন মোহাম্মদ রানা এবং সমকামিতায় অভিযুক্ত ইসলাম শিক্ষা বিভাগের রমজান আলী। এছাড়া বিতর্কিত কর্মকান্ডের সহযোগিতার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন ক্রীড়া শিক্ষক ফিরোজ আলম ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী লীগের শাসনামলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের সহযোগিতায় কলেজটিকে জিম্মি করেন প্রতিপয় শিক্ষক। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ২৬ বছর ধরে অধ্যক্ষের পদে দায়িত্বরত মো. তৌহিদ হোসেনকেও চাকরিচ্যুত করেন তারা। জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্ব দখল করেন ভূগোল বিভাগের প্রভাষক আলী হোসেন, দর্শন বিভাগের প্রভাষক হোসাইন মোহাম্মদ রানাসহ তাদের অনুসারী শিক্ষকরা। তাদের ছত্রছায়ায় কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ছাত্রলীগের দলীয় কার্যক্রম।

সম্প্রতি জোরপূর্বক অধ্যক্ষের পদ দখল করে নেন ভূগোল বিভাগের প্রভাষক আলী হোসেন। অধ্যক্ষের পদে বসেই তিনি জড়িয়ে পড়েন একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে। সমকামিতার অভিযোগে কলেজ থেকে একাধিকবার বহিষ্কৃত ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে রমজান আলীকে আবারও নিয়োগ দেন তিনি।

কতিপয় শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর ও নির্যাতনের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তবে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ মোশারফ সম্পদ ও সাধারণ সম্পাদক রুবায়েত শাহরিয়া শান্ত’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে রাখতেন জোরপূর্বক অধ্যক্ষের পদে থাকা আলী হোসেন।

সম্প্রতি ছাত্র সমাজের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কলেজের বিতর্কিত অধ্যক্ষ আলী হোসেনের পদত্যাগ’সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৪ আগস্ট বুধবার ২১ দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারীরা। একই দাবিতে পরের দিন বৃহস্পতিবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন অধিকাংশ শিক্ষক।

আন্দোকারী শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল- অধ্যক্ষ আলী হোসেন, দর্শন বিভাগের হোসাইন মো. রানা‌ ও সমকামিতায় অভিযুক্ত ইসলাম শিক্ষা বিভাগের রমজান আলীকে বরখাস্ত করা। তাদের সহযোগী হিসেবে ল্যাব শিক্ষক আবু সাঈদ, ক্রীড়া শিক্ষক ফিরোজ আলম, বাংলা বিভাগের দিলারা খানম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মুস্তাফিজুর রহমান, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের আমিনুল ইসলামের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, মিথ্যা মামলায় বরখাস্তকৃত পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক হাসান মাহমুদকে পুনর্বহাল, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ।

এছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী শহীদ তানজির খান মুন্নার স্মরণে লাইব্রেরীর নামকরণ করা। স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিনের ব্যবস্থা। সাবেক ছাত্রলীগ পদধারীদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা।ছাত্র-শিক্ষক কল্যাণ তহবিল, বিভিন্ন ক্লাব, কলেজের ল্যাব ও লাইব্রেরী সংস্কার করা। এ্যালামনাই এসোসিয়েশন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, জেনারেটর, বিশুদ্ধ পানি, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষে সাউন্ড সিস্টেম, প্রজেক্টরের ব্যবস্থা’সহ কলেজকে সম্পূর্ণ ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিমুক্ত রাখার দাবি জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *