মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
৫ অক্টোবর শনিবার সকালে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। মানুষ গড়ার কারিগর এ মহান শিক্ষকেরা অবসর ভাতা পেতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ৬ মাসের মধ্যে ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও সময় লাগে বছরের পর বছর। বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কল্যাণ বোর্ডে অবসরের পর ধন্না দিলেও মিলেনা অবসরকালীন ভাতা। সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিরাই অবসরের পর হারাতে বসেছেন তাদের সম্মান। অসুস্থতাজনিত কারণে চাকরিরত অবস্থায় মারা যান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দ্বীপশিখা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম। মৃত্যুর পরে জানা যায়, ১০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। একদিকে স্বামীর শূন্যতা অন্যদিকে ঋণের চাপে ২ সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার স্ত্রী। স্বামীর ঋণ পরিশোধ ও সংসারের ভরণপোষণের জন্য অবসর ভাতার জন্য ছুটোছুটি করেন তিনি। কয়েকবার ঢাকায় সংশ্লিষ্ট বোর্ডে গিয়েও মেলেনি সুফল। এখনো সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। কোন কোন শিক্ষক চাকরিরত অবস্থায় মারা গিয়েছেন। আবার কেউ স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে গিয়েও পাচ্ছেন না অবসরজনিত ভাতা। দিনের পর দিন ঘুরেও মিলছেনা কোন সুরাহা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অনেকের শুরু হয়নি ভাতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কাজ। এতে করে সংসার চালাতে দায় হয়ে পড়েছে অনেক পরিবারের। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমপিওভুক্ত বে-সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। বছরের পর বছর সরকারি দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মেলেনা এ অবসর ভাতা। এতে করে অবসরে ভালো মতন চিকিৎসা ও ভরণপোষণ করতে পারেননা তারা। নজরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর ২ সন্তানের মা-বাবা আমিই। আমাদের অল্প একটু আবাদি জমি রয়েছে। ভেবেছিলাম অবসর ভাতা পেলে কিছুটা স্বস্তি পাব৷ কয়েকদিন পর জানতে পারি সোনালী ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। তারপর থেকে আমি আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আবাদি জমির ফসল বিক্রি করে অবসর ভাতার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছি। সব কাগজ পত্র জমা দিয়েছি। কোন খবর পাওয়া যায় না। ব্যাংকের চাপও অনেক বেশি। আমার ২ সন্তানের কথা ভেবে এই সুবিধাটি দ্রুত সময়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি। আখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আবদুল্লাহ মানিক বলেন, আমি ২ বছর আগে অবসর গ্রহণ করেছি। এখনো ফাইলের কাজ শুরু হয়নি। এখন আমার জরুরি প্রয়োজন অবসর ভাতার। অথচ কর্তৃপক্ষের কোন খবর পাচ্ছিনা। শিক্ষক প্রতিনিধি ও গিলাবাড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবীব বলেন, আমাদের শিক্ষকেরা অবসর ভাতা পেতে প্রতিনিয়ত হেনস্তার শিকার হয়ে থাকেন। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকেরা অবসরে চলে যাওয়ার পর নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। যখন তার অবসর ভাতা সুবিধা প্রয়োজন সেটা তারা পেয়ে থাকেননা। আমরা এ বিষয়ে এর আগেও জানিয়েছে। বর্তমান সরকার কাছেও আকুল আবেদন যাতে সহজতর ও স্বল্প সময়ে সুবিধাটি দেয়া হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আখতার বলেন, প্রতিদিনই কেউ না কেউ অবসরে যাচ্ছেন। অনেকে এসে আমাদের কাছে অবসর ভাতা যথাসময়ে না পাওয়ার কথা বলেন৷ এতে করে তাদের খরচ ও বাড়তি ভোগান্তি হয়। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বলেছি আরো বলব।